তাপ: তাপ একপ্রকার শক্তি যা ঠান্ডা বা গরমের অনুভূতি জন্মায়। এস আই পদ্ধতিতে তাপের একক হলো জুল। এস আই পদ্ধতি চালুর পূর্বে তাদের একক ছিল ক্যালরি। ১ গ্রাম পানির তাপমাত্রা ১ সেলসিয়াস বৃদ্ধি করতে যে তাপ প্রয়োজন তাকে ১ ক্যালরি বলে। সুতরাং ১ গ্রাম পানির তপমাত্রা ২০ থেকে ৩০ সেলসিয়াস বৃদ্ধি করতে তাপ প্রয়োজন ১০ ক্যালরি।
অতএব তাপ বস্তুর ভর (গ), আপেক্ষিক তাপ (ঝ) এবং তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে।
তাপমাত্রা: তাপমাত্রা হচ্ছে কোন বস্তুর তাপীয় অবস্থা যা ঐ বস্তুটি অন্য বস্তুর তাপীয় সংস্পর্শে আসলে তাপ গ্রহণ না বর্জন করবে তা নির্দেশ করে। এস আই পদ্ধতিতে তাপমাত্রার একক কেলভিন।
তাপমাত্রার আরো তিনটি একক আছে তা হলো-
(সেলসিয়াস), (ফারেনহাইট) এবং (রোমার)
তাপের একক: তাপ ও তাপমাত্রা একই বিষয় নয়। সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রার বস্তু থেকে নিম্ন তাপমাত্রার বস্তুতে তাপ প্রবাহিত হয়। তাপমাত্রার পার্থক্যজনিত কারণে বিভিন্ন পদ্ধতিতে যেমন- পরিবহন, পরিচলন, বিকিরণ প্রক্রিয়ায় তাপশক্তি সঞ্চালিত হয়। ঝও পদ্ধতিতে তাপের একক হলো জুল । পূর্বে তাপের একক হিসাবে ক্যালরি ব্যবহৃত হতো।
-------তাপ সঞ্চালন------
তাপ সঞ্চালন: তাপ বেশি তাপমাত্রা বিশিষ্ট স্থান থেকে কম তাপমাত্রা বিশিষ্ট স্থানের দিকে প্রবাহিত হয়। কোনো মাধ্যম ব্যবহার করে তাপ স্থানান্তরিত হওয়ার পদ্ধতিকে তাপ সঞ্চালন বলে। তিন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হয়-
১. তাপের পরিবহন ২. তাপের পরিচলন ৩. তাপের বিকিরণ
সুপরিবাহী: যে সব পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ সহজে পরিবাহিত হতে পারে, তাদের সুপরিবাহী পদার্থ বলে। যেমন- লোহা, তামা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি। কঠিন পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ পরিবহন সবচেয়ে বেশি হয়।
কুপরিবাহী: যে সব পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ সহজে পরিবাহিত হতে পারে না, তাদের কুপরিবাহী পদার্থ বলে। যেমন- তুলা, কাচ, পশম প্রভৃতি।
তাপের পরিবহনঃ পদার্থের অণুগুলো স্থান পরিবর্তন না করে স্পন্দনের মাধ্যমে এক অণু থেকে অন্য অণুতে তাপ সঞ্চালনের প্রক্রিয়াকে তাপের পরিবহন বলে। যেমন- চুলার উপর রাখলে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি কেটলির হাতল গরম হয়। এটি তাপের পরিবহনের জন্য হয়।
তাপের পরিচলন: পদার্থের অণুগুলোর চলাচল দ্বারা উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতর অংশ তাপ সঞ্চালিত হওয়ার পদ্ধতি হল তাপের পরিচলন পদ্ধতি। তরল বা বায়বীয় পদার্থে তাপ এ পদ্ধতিতে সঞ্চালিত হয়। এই ক্ষেত্রে অনুগুলো স্থানান্তরিত হয়ে তাপ সঞ্চালিত হয়। এই ক্ষেত্রে অণুগুলি স্থানান্তরিত হয়ে তাপ সঞ্চালন করে।
তাপের বিকিরণ: জড় মাধ্যম ছাড়া তাড়িত চৌম্বক তরঙ্গের আকারে উষ্ণ বস্তু থেকে শীতল বস্তুতে তাপ সঞ্চালিত হওয়ার পদ্ধতিই তাপের বিকিরণ পদ্ধতি। এই ক্ষেত্রেও অণু স্থানান্তরিত হয়। বিকিরনের ক্ষেত্রে অণুগুলো স্থান পরিবর্তন করে।
-------তাপ পরিমিতি এবং তাপ প্রবাহের মূলনীতি------
-------তাপ গতিবদ্যিা------
তাপ গতিবিদ্যা: তাপগতিবিজ্ঞান (ইংরেজি: ঞযবৎসড়ফুহধসরপং) পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে তাপশক্তি ও তাপমাত্রা এবং এরসাথে শক্তি ও কাজের সম্পর্ক আলোচনা করা হয়। তাপগতিবিজ্ঞানের মূলনীতিগুলি বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের সমস্ত শাখায় মৌলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাপগতিবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় ধারণা হল বৃহৎ সিস্টেম। জ্যামিতিকভাবে আলাদা করা যায় এমন একটি পদার্থ-অংশকে বৃহৎ সিস্টেম নামে সংজ্ঞায়িত করা হয়। সেই জ্যামিতিক গতির বাইরে বিশ্বের যে অংশ, তাকে পরিবেশ বলে। যদি সিস্টেমটি কোন অসীম, অনুত্তেজিত পরিবেশের সহাবস্থানে থাকে, তাহলে সেই পরিবেশকে রিজার্ভায়ার বলে।
ভারসাম্যাবস্থায় সিস্টেমটি তাপমাত্রা, চাপ ও আয়তন-এর মত কিছু পরিমাপযোগ্য বৈশিষ্ট্যের সাহায্যে বর্ণনা করা যায়। এগুলি তাপগতিবৈজ্ঞানিক চলক হিসেবে পরিচিত। এগুলি ছাড়াও আরও অনেক চলক, যেমন- ঘনত্ব, আপেক্ষিক তাপ, সংকোচনীয়তা, তাপীয় প্রসারাংক, ইত্যাদি চিহ্নিত ও তুলনা করে কোন বস্তুও পরিবশের সাথে বস্তটির সম্পর্ক আরও পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ করা যায়।
সিস্টেমটির ভারসাম্যাবস্থাকে নির্দেশ করার যে চলক সেটি হল এনট্রপি। খুব সহজভাবে বলতে গেলে, এনট্রপি সিস্টেমটির মধ্যে বিশৃঙ্খলার একটি পরিমাপ। যখন একটি সিস্টেমের এনট্রপি সর্বাধিক হয়, তখন সেটি ভারসাম্যাবস্থায় চলে আসে। আর ভারসাম্যাবস্থার সবথেকে গুরুত্ত¡পূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল, এই অবস্থায় যে কোন বৃহৎ সিস্টেমের চলকগুলি বিগত পরিবর্তনের অনপেক্ষ হয়ে যায়, আর সময়ের সাথে তারা আর পাল্টায় না।
যখন কোন বৃহৎ সিস্টেম একটি ভারসাম্যাবস্থা থেকে আরেকটি ভারসাম্যাবস্থায় রূপান্তরিত হয়, তখন বলা হয় একটি তাপগতিবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া নিষ্পন্ন হয়েছে। কিছু কিছু তাপগতিবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া বিপরীতকরণযোগ্য, আর অন্যগুলির বিপরীতকরণ সম্ভব নয়। ১৯শ শতাব্দীতে অত্যন্ত কষ্টসাধ্য পরীক্ষণের মাধ্যমে আবিষ্কৃত তাপগতিবৈজ্ঞানিক সূত্রগুলি সমস্ত তাপগতিবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং এগুলির সীমা নির্ধারণ করে।
-------তাপ ও গতিবিদ্যার প্রথম সূত্র------
তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র প্রকৃতপক্ষে শক্তির নিত্যতা সূত্রের একটি বিশেষ রূপ। বিজ্ঞানী জুল সর্বপ্রথম কাজ ও তাপের মধ্যে একটি সঠিক সম্পর্ক নির্ণয় করেন এবং একে সূত্র আকারে প্রকাশ করেন। কিছু পরিমান তাপকে সম্পূর্ণরূপে কাজে রূপান্তর করলে অথবা কাজকে তাপে রূপান্তর করলে কাজ তাপের সমানুপাতিক হবে।
-------তাপ গতিবিদ্যার আধুনিক সূত্র------
কোনো বস্তুতে তাপ প্রয়োগ করলে ঐ তাপ বস্তুর আভ্যন্তরীন শক্তির কিছু পরিবর্তন ঘটায় এবং বস্তুর অণু দ্বারা কিছু কাজ সম্পাদিত হয়।
-------গ্রীণ হাউজ ক্রিয়া------
অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়াঃ যে প্রক্রিয়ায় কোনো উৎস থেকে আগত তাপ আর ঐ উৎসে ফিরে যেতে পারে না তাকে অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া বলে। এই প্রক্রিয়ায় তাপ আসতে থাকলে কোনো বস্তুর তাপমাত্রা ক্রমশই বাড়তে থাকে একে গ্রীণ হাউজ ক্রিয়া বলে। সূর্য থেকে অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়াতে পৃথিবীতে তাপ আসছে।
গ্রীণ হাউজ ক্রিয়া: সূর্য থেকে পৃথিবীতে অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ায় তাপ আসছে বলে পৃথিবীর তাপমত্রা প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের ধারনা এইভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে একসময় মেরুতে সঞ্চিত বরফ গলে পৃথিবীর বিপর্যস্ত হবে। আর এইভাবে তাপমাত্রার সমতা সৃষ্টি হলে একসময় তাপ ইঞ্জিন কোনো কাজ করবে না । অপ্রত্যাবিত প্রক্রিয়ায় আগত তাপ ক্রমশ বৃদ্ধি হওয়াকে গ্রীণ হাউজ ক্রিয়া বলে।
গ্রীন হাউজের প্রভাবের ফলে সমুদ্রের স্তর ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার বেড়ে যাবে। এর ফলে বাংলাদেশ সহ উপকূলবর্তী এলাকার একটি বিরাট অংশ তলিয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। আবহাওয়ার প্রকৃতি বদলে যাবে। ফসল ডুবে যাবে, বনাঞ্চল ধ্বংস হবে, সংক্রামিতহবে সরবরাহকৃত পানি। বন্যজন্তুর পরিমান হ্রাস পাবে ও মানুষ হারাবে তাদের আবসস্থল। ঘূর্ণিঝড় আরো অধিক শক্তিতে আঘাত হানবে বছরে কয়েকবার। বৃষ্টিবহুল এলাকা বিষুবীয় অঞ্চল থেকে মেরু পর্যন্ত বৃস্তিত হবে। বাংলাদেশ আরো বর্ষাসিক্ত হয়ে উঠবে। ফসল উৎপাদন ও খাদ্যভাব হবে প্রকট। উত্তপ্ত পৃথিবীতে নতুন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দেবে। বিপুল সংখ্যক আশ্রয়হীন জনগোষ্ঠীকে নিয়ে বাংলাদেশকে মারাত্মক সমস্যার সম্মূখীন হতে হবে।
বিস্তারিত পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে পড়ুন:
ডাউনলোড বিজ্ঞানের লেকচার ৩ PDF